“আমার অংশীদার আমার অংশ বিক্রি করে দিয়েছে। এখন আমি কী করতে পারি?”
অনেক সহ-ভূমি মালিক এই প্রশ্নটি করেন। ঠিক এখানেই ‘অগ্রক্রয়’ শব্দটির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। চলুন ধাপে ধাপে বুঝে নেই—অগ্রক্রয় কী, এটি কখন প্রযোজ্য, এবং কিভাবে মামলা করতে হয়।
সূচীপত্র
- অগ্রক্রয় বলতে কী বোঝায়?
- অগ্রক্রয়ের আইনগত ভিত্তি কোথায়?
- কখন অগ্রক্রয়ের অধিকার জন্ম নেয়?
- কারা অগ্রক্রয় মামলা করতে পারে?
- অগ্রক্রয় মামলা কত দিনের মধ্যে করতে হবে?
- মুসলিম আইনে অগ্রক্রয়ের অধিকার: প্রতিবেশীর অধিকার রক্ষার এক ব্যতিক্রমধর্মী ব্যবস্থা
- অন্যান্য আইনের তুলনায় পার্থক্য কোথায়?
- মামলা করার সময়সীমা কত?
- মুসলিম না হলে কী এই অধিকার প্রযোজ্য?
- মুসলিম আইনের তিন ধাপের আনুষ্ঠানিকতা
- রাষ্ট্রীয় ও অকৃষি আইনে অগ্রক্রয়ের সময়সীমা
- অগ্রক্রয়ের মামলা করতে কী কী তথ্য জমা দিতে হয়?
- অগ্রক্রয় মামলার কোর্ট ফি কত?
- মামলায় কাদের বিবাদী করা আবশ্যক?
- অগ্রক্রয় মামলার তামাদি (Limitation)
- মামলা নিষ্পত্তির পর কী হয়?
- অগ্রক্রয়ের অধিকার কখন বিলুপ্ত হয়?
- অগ্রক্রয় মামলার ধরন কত প্রকার?
- ব্যক্তিগত প্রতিফলন
- উপসংহার
- সংক্ষিপ্ত তথ্য (Quick Facts)
অগ্রক্রয় বলতে কী বোঝায়?
অগ্রক্রয় বা প্রিয়েমশন (Pre-emption) হচ্ছে এমন একটি অধিকার, যার মাধ্যমে একজন সহ-শরীক বা সংলগ্ন জমির মালিক—তাদের অংশ বা আশেপাশের জমি যদি কোনো আগন্তুক ব্যক্তি ক্রয় করে—তাহলে তারা প্রথমে সেটি নিজে কিনে নেওয়ার দাবি করতে পারেন।
এই অধিকার বিশেষ করে মুসলিম আইন ও বাংলাদেশের ভূমি আইন অনুযায়ী স্বীকৃত। একে মুসলিম আইন অনুসারে হক শুফা বলেও ডাকা হয়।
অগ্রক্রয়ের আইনগত ভিত্তি কোথায়?
বাংলাদেশে অগ্রক্রয়ের অধিকার দুইভাবে আসে:
- রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০ (সংশোধন ২০০৬) অনুযায়ী
- মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী
রাষ্ট্রীয় আইনে কোথায় বলা আছে?
আইনের ৯৬(১) ধারা অনুযায়ী—যদি কোনো রায়তের কৃষি জমির অংশ সহ-শরীক ছাড়া অন্য কেউ কিনে নেয়, তাহলে সহ-শরীক প্রজা ৮৯ ধারায় উল্লিখিত নোটিশ প্রাপ্তির ২ মাসের মধ্যে অথবা বিক্রয় সম্পর্কে অবগত হওয়ার ২ মাসের মধ্যে আদালতে মামলা করতে পারেন।
তবে কোনোভাবেই দলিল নিবন্ধনের ৩ বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলে মামলা করা যাবে না।
কখন অগ্রক্রয়ের অধিকার জন্ম নেয়?
অগ্রক্রয়ের অধিকার তখনই সৃষ্টি হয়, যখন কোনো স্থাবর সম্পত্তি সহ-শরীকের বাইরে কারো কাছে বিক্রি হয়।
এই বিক্রয়ের দিন থেকেই আইনি ঘড়ি চালু হয়।
অবশ্য, নিচের ক্ষেত্রে এই অধিকার তৈরি হয় না:
- দান বা উপহার (ছদকা)
- ওয়াকফ বা মিরাশ
- উইল বা ইজারা
কারা অগ্রক্রয় মামলা করতে পারে?
এই প্রশ্নটি খুবই সাধারণ—অগ্রক্রয় মামলা কে করতে পারে?
উত্তর:
- রাষ্ট্রীয় আইনে: কেবল উত্তরাধিকার সূত্রে সহ-শরীক ব্যক্তিরাই এই মামলা করতে পারেন।
- মুসলিম আইনে:
১. উত্তরাধিকার সূত্রে সহ-শরীক
২. ক্রয়সূত্রে সহ-শরীক
৩. সংলগ্ন জমির মালিকরা
অগ্রাধিকার:
উত্তরাধিকার > ক্রয়সূত্র > সংলগ্ন ভূমি
অগ্রক্রয় মামলা কত দিনের মধ্যে করতে হবে?
এটি একটি সময় সংবেদনশীল বিষয়।
রাষ্ট্রীয় আইনে:
- নোটিশ পেলে ২ মাস
- নোটিশ না পেলে বিক্রয় সম্পর্কে জানার ২ মাস
- তবে সর্বোচ্চ ৩ বছর (রেজিস্ট্রেশনের তারিখ থেকে)
মুসলিম আইনে অগ্রক্রয়ের অধিকার: প্রতিবেশীর অধিকার রক্ষার এক ব্যতিক্রমধর্মী ব্যবস্থা
মুসলিম আইন অনুসারে অগ্রক্রয় হলো এমন একটি বিশেষ অধিকার, যার মাধ্যমে প্রতিবেশী বা সংলগ্ন জমির মালিক, অন্য কেউ তাদের পাশে জমি কিনে নিলে, সেই জমি প্রথমে নিজে কেনার দাবি তুলতে পারেন। উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক—রহিম এবং গণি একই এলাকায় থাকেন। রহিম যদি গণির সম্মতি ছাড়া তার জমি মেহেদী নামক অন্য এক দূরবর্তী ব্যক্তির কাছে বিক্রি করেন, সেক্ষেত্রে গণি তার প্রতিবেশী অধিকার প্রয়োগ করে সেই জমি কিনে নেওয়ার আইনি দাবি তুলতে পারেন।
মামলা করার জন্য আগাম টাকা জমা দিতে হয় কি?
এই আইনে মামলা করার সময় বিক্রিত জমির ক্রয়মূল্য আগে থেকেই আদালতে জমা দিতে হয় না। বরং, মামলায় জয়ী হয়ে আদালতের আদেশপ্রাপ্তির পরেই টাকা জমা দিয়ে জমি নিজের নামে নিতে হয়।
কারা এই দাবি তুলতে পারে?
মুসলিম আইন অনুযায়ী নিম্নলিখিত তিন শ্রেণির ব্যক্তি অগ্রক্রয়ের অধিকার প্রয়োগ করতে পারেন:
- যিনি জমির সহ-মালিক বা অংশীদার
- যিনি ঐ জমির সঙ্গে সড়ক ব্যবহার বা পানি নিষ্কাশনের সুবিধা পান
- যিনি ঐ জমির সংলগ্ন ভূমির মালিক
এই আইনি অধিকারকে ‘হক শুফা’ বা শুফা অধিকার বলা হয়।
অন্যান্য আইনের তুলনায় পার্থক্য কোথায়?
রাষ্ট্রীয় প্রজাস্বত্ব আইনের ৯৬ ধারায় বলা আছে—শুধুমাত্র উত্তরাধিকার সূত্রে সহ-অংশীদারগণই মামলা করতে পারবেন, এবং মামলার শুরুতেই দলিলে উল্লিখিত মূল্যের সঙ্গে অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ আদালতে জমা দিতে হবে। কিন্তু মুসলিম আইন এই শর্ত আরোপ করে না। বরং যেকোনো সহ-শরীক বা সংলগ্ন মালিক তার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সরাসরি মামলা করতে পারেন।
মামলা করার সময়সীমা কত?
১৯০৮ সালের দেওয়ানি কার্যবিধির প্রথম তফসিলের ১০ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা আছে, দলিল নিবন্ধনের তারিখ বা দখল হস্তান্তরের তারিখ থেকে এক বছরের মধ্যে অগ্রক্রয়ের মামলা করতে হবে। সময়সীমা অতিক্রম করলে মামলাটি তামাদি হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না যদি যথোপযুক্ত ব্যাখ্যা দেওয়া যায়।
একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার দৃষ্টান্তে দেখা যায়, যেখানে দলিল নিবন্ধনের কয়েক মাস পর মামলা করা হয়েছিল, তবুও আপিল আদালত সেটিকে তামাদি হিসেবে বাতিল করেনি। [৩১ ডিএলআর (এডি) ১১০]
মুসলিম না হলে কী এই অধিকার প্রযোজ্য?
উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী, মুসলিম আইনের অগ্রক্রয় মামলা কেবল তখনই প্রযোজ্য হয় যখন বিক্রেতা ও ক্রেতা উভয়েই মুসলিম হন। যদি বিক্রেতা অমুসলিম হন (যেমন হিন্দু), তবে মুসলিম ক্রেতার কাছ থেকে জমি কেনার ক্ষেত্রে কোনো মুসলমান প্রতিবেশী অগ্রক্রয়ের দাবি তুলতে পারেন না।
মুসলিম আইনের তিন ধাপের আনুষ্ঠানিকতা
অগ্রক্রয়ের দাবি করতে হলে মুসলিম আইন তিনটি ধাপে কিছু নির্দিষ্ট আনুষ্ঠানিকতা মানতে বলে। এগুলো যথাযথভাবে এবং সময়মতো না করলে মামলা খারিজ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
১. তলব-ই-মওসিবত (প্রাথমিক দাবি)
এই পর্যায়ে জমি বিক্রয়ের সংবাদ পাওয়ার পরপরই অগ্রক্রয়কারীকে তার আগ্রহ প্রকাশ করতে হয়। এটা মৌখিক বা লিখিতভাবে হতে পারে। এর মাধ্যমে জানাতে হয়, “আমি ঐ জমি নিতে আগ্রহী”।
২. তলব-ই-ইশাদ (সাক্ষীর সামনে ঘোষণা)
প্রথম ঘোষণার পর কমপক্ষে দুইজন সাক্ষীর সামনে এই দাবিকে আবার প্রকাশ করতে হয়। এ সময় দাবিদার যদি বিক্রেতা বা ক্রেতার সামনে না যেতে পারেন, তাহলে বিক্রিত জমির সম্মুখেই এই দাবি জানাতে হবে।
৩. তলব-ই-তমলিক (সম্পত্তি হস্তান্তরের দাবি)
প্রথম দুই ধাপ সঠিকভাবে পূর্ণ হওয়ার পর যদি ক্রেতা জমি দিতে রাজি হন, তাহলে নতুন কোনো প্রক্রিয়া ছাড়াই অগ্রক্রয়কারী সেই জমির মালিক হন। তবে যদি ক্রেতা রাজি না হন, তাহলে আদালতে ২৩১ ধারায় মামলা দায়ের করে জমির মালিকানা দাবি করতে হবে।
রাষ্ট্রীয় ও অকৃষি আইনে অগ্রক্রয়ের সময়সীমা
রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০ (ধারা ৯৬)
- নোটিশ পেলে: ২ মাস
- নোটিশ না পেলে: বিক্রয় সম্পর্কে জানার পর ২ মাস
- সর্বোচ্চ সময়: রেজিস্ট্রেশনের তারিখ থেকে ৩ বছর
অ-কৃষি প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৪৯ (ধারা ২৪)
- নোটিশ পেলে: ৪ মাস
- নোটিশ না পেলে: জানার পর ৪ মাস
- মামলার সময় চলাকালীন অগ্রক্রয়কারী মারা গেলে তার উত্তরসূরি মামলা চালাতে পারেন
অগ্রক্রয়ের মামলা করতে কী কী তথ্য জমা দিতে হয়?
এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:
- ক্রয়মূল্য অনুযায়ী টাকা
- ২৫% ক্ষতিপূরণ
- ৮% বার্ষিক সুদ (রেজিস্ট্রেশনের দিন থেকে)
এই তিনটি অর্থ মামলার শুরুতে বা আদালতের অনুমতি নিয়ে পরে জমা দিতে হবে।
যদি জমির উন্নয়ন হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত অর্থ আদালত নির্ধারণ করতে পারে।
অগ্রক্রয় মামলার কোর্ট ফি কত?
কোর্ট ফি নির্ভর করে:
- জমির বাজারমূল্য
- জমার পরিমাণ
- আদালত অনুযায়ী ন্যূনতম মামলা দায়ের ফি
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি—এই ধরনের মামলায় ১৫০০–৫০০০ টাকা পর্যন্ত কোর্ট ফি সাধারণত হয়ে থাকে। তবে সুনির্দিষ্ট তথ্যের জন্য স্থানীয় আইনজীবীর সহায়তা নেওয়া উত্তম।
মামলায় কাদের বিবাদী করা আবশ্যক?
অগ্রক্রয় মামলায় নিচের পক্ষগুলোকে অবশ্যই বিবাদী করতে হবে:
- জমি ক্রয়কারী ব্যক্তি
- বাকি সহ-শরীক
- সংলগ্ন মালিক (যদি প্রযোজ্য হয়)
✍️ মনে রাখবেন, বাদী ও বিবাদী সঠিক না হলে মামলাটি খারিজ হতে পারে।
অগ্রক্রয় মামলার তামাদি (Limitation)
“তামাদি” শব্দটি মানে—সময়সীমা শেষ হয়ে যাওয়া।
আইনে বলা আছে:
৩ বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলে আর অগ্রক্রয় মামলা করা যাবে না।
এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে অধিকার বিলুপ্ত করে দেয়।
মামলা নিষ্পত্তির পর কী হয়?
যদি আবেদনকারীর পক্ষে রায় আসে, তবে:
- আদালত দলিল গ্রহীতার রেজিস্ট্রি বাদ দিয়ে আবেদনকারীর নামে রেজিস্ট্রি করে দিবেন।
- আবেদনকারীকে নতুন করে কোনো রাজস্ব বা রেজিস্ট্রি ফি দিতে হয় না।
অগ্রক্রয়ের অধিকার কখন বিলুপ্ত হয়?
নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে অধিকার চলে যায়:
- সহ-শরীক মর্যাদা বিলুপ্ত হলে
- নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মামলা না করলে
- বিক্রি করা জমি বিক্রেতার কাছে ফেরত গেলে
অগ্রক্রয় মামলার ধরন কত প্রকার?
সাধারণত ৪ ধরণের মামলা হয়ে থাকে:
- কৃষি জমির অগ্রক্রয় (রাষ্ট্রীয় আইন)
- অকৃষি জমির অগ্রক্রয় (অকৃষি প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৪৯)
- মুসলিম আইনে অগ্রক্রয়
- বণ্টন আইনের ৪ ধারায় অভিভক্ত বাড়ির অগ্রক্রয়
ব্যক্তিগত প্রতিফলন
আমি একবার এমন একটি মামলার খসড়া তৈরি করেছিলাম যেখানে একজন ভাই তার অংশ বিক্রি করে দিয়েছিলেন। আরেক ভাই মামলা করে জমি ফিরিয়ে নেন—আইন তাকে সেই অধিকার দিয়েছে।
এই অভিজ্ঞতা আমাকে শিখিয়েছে—আইন শুধু কাগজের নিয়ম নয়, এটি মানুষের অধিকার রক্ষার একটি যন্ত্র।
উপসংহার
অগ্রক্রয় কোনো সাধারণ বিষয় নয়। এটি একটি আইনি অধিকার যা সঠিকভাবে প্রয়োগ করলে একজন ব্যক্তি তার জমির সম্মান ও অধিকার রক্ষা করতে পারেন।
সঠিক সময়ে সঠিক আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমেই এই অধিকার বজায় রাখা যায়।
❝ জমি যেমন অমূল্য, তেমনই মূল্যবান হচ্ছে আপনার আইনি সচেতনতা। ❞
সংক্ষিপ্ত তথ্য (Quick Facts)
বিষয় | তথ্য |
---|---|
📌 কী | সহ-শরীক বা সংলগ্ন মালিকের জমি কেনার অধিকার |
📆 সময়সীমা | নোটিশের ২ মাস / রেজিস্ট্রেশনের ৩ বছরের মধ্যে |
⚖️ মামলা কারা করতে পারে | উত্তরাধিকার, ক্রয়সূত্রে, সংলগ্ন মালিক |
💰 আদালতে জমা দিতে হয় | মূল্য + ২৫% ক্ষতিপূরণ + ৮% সুদ |
🧾 কোর্ট ফি | জমির পরিমাণভেদে পরিবর্তনশীল |
🚫 অধিকার বিলুপ্ত হয় যখন | সময়সীমা পেরিয়ে যায় বা শরীকত্ব শেষ হয় |
প্রয়োজনে কোনো অভিজ্ঞ আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করুন এবং নিজের অধিকার নিজেই রক্ষা করুন।
আর্টিকেলটি আপনার উপকারে এলে শেয়ার করুন বন্ধুদের সঙ্গে, যাতে সবাই আইন সম্পর্কে সচেতন হতে পারে।
মন্তব্য লিখুন