একজন মানুষের জীবদ্দশায় অর্জিত সম্পদের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নির্ধারণের জন্য উইল বা অছিয়ত (will) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি মূলত একটি আইনি নথি যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি তার মৃত্যুর পর তার সম্পত্তি এবং অন্যান্য বিষয়গুলো কিভাবে বণ্টন করা হবে তা নির্দেশ করে। উইল করা ব্যক্তির ইচ্ছার চূড়ান্ত প্রকাশ হিসেবে বিবেচিত হয়, যা তার মৃত্যুর পর সম্পত্তি ও বিষয়াদির বিতরণের ক্ষেত্রে আইনি মর্যাদা বহন করে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে উইল বা অছিয়ত সম্পর্কে জানার গুরুত্ব অপরিসীম, কারণ সমাজে অনেক সময় পরিবারের মধ্যে সম্পত্তির নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। উইল প্রস্তুত করে সেই জটিলতা দূর করা সম্ভব হয়, কারণ এটি আইনত বৈধ এবং সম্পত্তির উত্তরাধিকারী কারা হবেন, তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে। আমরা উইল বা অছিয়ত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি, যাতে পাঠকরা এর আইনি প্রেক্ষাপট, গুরুত্ব এবং প্রস্তুতির ধাপগুলো সম্পর্কে সচেতন হতে পারেন।
সূচীপত্র
১. উইল বা অছিয়ত কী?
উইল বা অছিয়ত একটি আইনি দলিল, যার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি তার মৃত্যুর পর তার সম্পত্তি কিভাবে বণ্টন করা হবে তা নির্ধারণ করে দেন। উইল লিখনকারীকে উইলকারক বা “testator” বলা হয় এবং উইলে যার নাম উল্লেখ করা হয়, তাকে বলা হয় উত্তরাধিকারী বা “beneficiary”। উইলে সম্পত্তি ছাড়াও আর্থিক সঞ্চয়, অলঙ্কার, জমি, বাড়ি এবং অন্যান্য বস্তু উল্লেখ করা যায়। উইলের মাধ্যমে সম্পত্তি বণ্টনের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা প্রদান করা যায় যা মৃত্যুর পর আইনি কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে কার্যকর করা হয়।
২. উইল বা অছিয়তের উদ্দেশ্য
উইল বা অছিয়ত মূলত একজন ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার সম্পত্তি ও বিষয়াদি সুষ্ঠুভাবে বণ্টনের জন্য ব্যবহৃত হয়। এর মাধ্যমে তিনি তার অর্জিত সম্পদ পরিবারের সদস্য, বন্ধুবান্ধব বা কোনো দাতব্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বণ্টন করার নির্দেশনা দিতে পারেন। উইল তৈরি করার কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য নিম্নরূপ:
- সম্পত্তির সুষ্ঠু বণ্টন: উইলের মাধ্যমে সম্পত্তি এবং সম্পদের নির্দিষ্ট বণ্টন নিশ্চিত করা যায়, যা পরিবারের সদস্যদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বা বিতর্ক থেকে রক্ষা করে।
- আইনি সুরক্ষা প্রদান: উইল তৈরি করলে, আইন অনুযায়ী সম্পত্তি বণ্টনের বৈধ নির্দেশনা থাকে, যা অবৈধ দাবি বা জটিলতা এড়াতে সাহায্য করে।
- মৃত্যুর পর নিজের ইচ্ছার প্রতিফলন: উইলের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি তার মৃত্যুর পর সম্পত্তি, দায়বদ্ধতা এবং সম্পদ সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে পারেন।
- দাতব্য কাজে সম্পত্তি দান: উইল তৈরি করার মাধ্যমে ব্যক্তি তার সম্পত্তি বা সম্পদের একটি অংশ দাতব্য প্রতিষ্ঠান বা অন্যান্য সামাজিক কাজে দান করতে পারেন।
৩. উইলের প্রকারভেদ
উইল সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে, এবং প্রতিটি ধরনের বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। নিচে তাদের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হলো:
- সাধারণ উইল (Simple Will): সাধারণ উইল হল সেই ধরনের উইল যেখানে ব্যক্তির সকল সম্পদ নির্দিষ্ট ব্যক্তির মধ্যে বণ্টন করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এখানে সম্পত্তির তালিকা এবং প্রতিটি উত্তরাধিকারীর নাম উল্লেখ করা হয়, যারা ব্যক্তি মারা গেলে তার সম্পত্তি পাবে।
- যৌথ উইল (Joint Will): যৌথ উইল সাধারণত দুইজন ব্যক্তি একসঙ্গে তৈরি করে, যেমন স্বামী-স্ত্রী। এই উইলে তাদের সম্মতিতে সম্পত্তি বণ্টনের বিষয় নির্ধারণ করা হয়। এক্ষেত্রে, উভয়ের মৃত্যুর পর সম্পত্তি কিভাবে বণ্টিত হবে তা উইলে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা থাকে।
- পাওয়ার অব অ্যাটর্নি উইল (Power of Attorney Will): এই ধরনের উইলে একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সম্পত্তি ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব প্রদান করা হয়। এক্ষেত্রে, উইলকারক মৃত্যুর আগে কোনো বিশেষ ব্যক্তি বা আইনজীবীকে তার সম্পত্তির দেখাশোনার দায়িত্ব দিতে পারেন, এবং তার মৃত্যুর পর সেই নির্দেশনা অনুযায়ী সম্পত্তি বণ্টন করা হয়।
- মৌখিক উইল (Oral Will): মৌখিক উইল খুব কম ক্ষেত্রে প্রযোজ্য এবং অনেক সময় আইনি জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। এই ধরনের উইলে ব্যক্তির মৃত্যু শয্যায় থাকা অবস্থায় বা মারাত্মক পরিস্থিতিতে তার মৌখিক নির্দেশনায় সম্পত্তি বণ্টন করা হয়। তবে বাংলাদেশে মৌখিক উইল খুব কম ক্ষেত্রেই আইনি গ্রহণযোগ্যতা পায়।
৪. উইল তৈরি করার আইনি প্রক্রিয়া
উইল তৈরি করা বাংলাদেশে একটি আইনি প্রক্রিয়া এবং এর জন্য কিছু নির্দিষ্ট ধাপ অনুসরণ করতে হয়। সঠিকভাবে আইনি পরামর্শ নিয়ে উইল তৈরি করলে ভবিষ্যতে যেকোনো আইনি জটিলতা থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। উইল তৈরি করার প্রক্রিয়াটি নিম্নরূপ:
ক. উইলকারকের যোগ্যতা নির্ধারণ
উইল তৈরি করার জন্য উইলকারককে অবশ্যই মানসিকভাবে সুস্থ এবং আইনি প্রাপ্তবয়স্ক (১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী) হতে হবে। মানসিক অসুস্থ ব্যক্তি বা অপ্রাপ্তবয়স্ক কেউ উইল তৈরি করতে পারবে না। উইলকারককে তার সম্পদের মালিকানা এবং তার ইচ্ছার প্রতি সম্পূর্ণ সচেতন থাকতে হবে।
খ. উইল প্রস্তুত করা
উইল প্রস্তুত করার জন্য উইলকারককে তার সমস্ত সম্পত্তি, সম্পদ এবং সম্পত্তির তালিকা তৈরি করতে হবে। এ সময়, উইলকারক তার সম্পত্তি কোন কোন ব্যক্তির মধ্যে কীভাবে বণ্টন করবেন, তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করতে পারেন। সম্পত্তি হিসেবে জমি, বাড়ি, অর্থ, সঞ্চয়, অলঙ্কার এবং অন্য কোনো সম্পদ উইলে উল্লেখ করা যেতে পারে।
গ. সাক্ষী নির্বাচন
উইল তৈরি করার সময় কমপক্ষে দুইজন সাক্ষী থাকা আবশ্যক, যারা উইলকারকের ইচ্ছার সত্যতা যাচাই করতে পারে। এই সাক্ষীরা উইলকারকের ইচ্ছাকে সঠিকভাবে অনুসরণ করছেন কিনা তা নিশ্চিত করবে এবং ভবিষ্যতে কোনো বিতর্ক সৃষ্টি হলে আইনি সাক্ষ্য হিসেবে কাজ করবে। সাক্ষীরা অবশ্যই উইলকারকের সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হতে পারবেন না।
ঘ. নথিপত্র সংরক্ষণ
উইল একটি আইনি দলিল, তাই এটি যথাযথভাবে নথিভুক্ত এবং সংরক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি। উইলকারক চাইলে আইনজীবীর মাধ্যমে উইল প্রস্তুত করতে পারেন এবং সরকারি নথিভুক্তিকরণ অফিসে এটি জমা দিতে পারেন। নথিভুক্ত করার মাধ্যমে উইলের আইনি বৈধতা নিশ্চিত হয় এবং এটি ভবিষ্যতে আদালতের মাধ্যমে কার্যকর হতে পারে।
ঙ. সম্পত্তির কতঅংশ উইল করা যায়?
কোনো মুসলিম ব্যক্তি তার দাফন-কাফন ব্যয় ও দেনা পরিশোধের পর, উদ্বৃত্ত সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশের অধিক উইল করতে পারে না।উইলকারী মৃত্যুর পর উত্তরাধিকারী সম্মতি না দিলে উইলের মাধ্যমে বৈধ এক-তৃতীয়াংশের অধিক পরিমাণ সম্পত্তি দান কার্যকর হবে না।তবে উত্তরাধিকারীদের মধ্যে মোট সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশের বেশি উইল করতে পারে। ১৯৯৬ সালের হাইকোর্ট বিভাগের আদেশ মোতাবেক আইনগত বৈধ।
চ. উইল পরিবর্তন বা বাতিল
উইল তৈরি করার পরেও উইলকারক তার ইচ্ছামত উইল পরিবর্তন বা বাতিল করতে পারেন। তবে এই পরিবর্তনটি সঠিকভাবে নথিভুক্ত করতে হবে এবং আইন অনুযায়ী তা বৈধভাবে সম্পন্ন করতে হবে। উইল পরিবর্তনের ক্ষেত্রে নতুন একটি উইল তৈরি করতে হয়, যাতে পুরানো উইলের সব ধারা বাতিল করা হয়।
ছ. উইলের ফর্মঃ
উইলের জন্য মুসলিম আইনে নিদির্ষ্ট কোনো ফর্ম নেই।মুসলিম আইনে উইল লিখিত না হলেও চলে, মৌখিক উইল ও আইনগত ভাবে সিদ্ধ।তবে উইল লিখিত না হলে অসুবিধা অনেক। এক্ষেত্রে উইল লিখিত হওয়াই শ্রেয়।উইল লিখিত হলে সাক্ষরিত হতে হবে । উইলকারীর অভিপ্রায় বুঝতে পারা গেলেই যথেষ্ট।
লেখা সম্ভব না হলেও, শুধুমাত্র ইশারা বা ভঙ্গিমার মাধ্যমে উইল করা যায়।মৃত্যুকালে একটি চিঠি লিখে সম্পত্তির বিন্যাস সম্পর্কে নির্দেশ দিয়ে গেলে সেই চিঠি উইল রূপে গণ্য হতে পারে। উইল রেজিষ্ট্রেশন করার প্রয়োজন পড়ে না, রেজিষ্ট্রেশন আইনের ১৮ ধারা মতে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তবে সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস আবেদন করলে উইল সম্পর্কিত রেজিষ্ট্রার অন্তর্ভূক্তি করানো যায়।
জ. উইলের প্রবেটঃ
কোনো উইল সরকারী ভাবে গ্রহণ করতে হলে আদালতের কাছ থেকে যে স্বীকৃতি নিতে হয় তাকেই প্রবেট বলে।একজন মুসলমান কর্তৃক সম্পাদিত উইল যখন যথাযথ প্রমাণ দ্বারা প্রমাণিত হবে, তখন কোন প্রবেট লাভ না করলে ও তা সাক্ষ্য হিসেবে গৃহীত হবে।তবে হিন্দু সম্প্রদায়ের কেই হলে আর তিনি যদি কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে উইল করে তবে তা কার্যকর করার জন্য প্রবেট করতে হয়।
৫. উইল তৈরি করার সময় যে বিষয়গুলো বিবেচনা করা উচিত
উইল তৈরি করার সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করা উচিত, যা উইল কার্যকর করার সময় আইনি এবং সামাজিক জটিলতা এড়াতে সাহায্য করবে। এই বিষয়গুলো হলো:
- উত্তরাধিকারীর নাম স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা: উইলে যার নাম উল্লেখ করবেন, তাদের নাম এবং সম্পর্ক সঠিকভাবে উল্লেখ করা উচিত। এতে পরবর্তীতে সম্পত্তি বণ্টনে কোনো ধরনের ভুল বোঝাবুঝি বা আইনি জটিলতা সৃষ্টি হবে না।
- সম্পত্তির সঠিক মূল্যায়ন: উইলে উল্লেখ করা সম্পত্তির সঠিক মূল্যায়ন এবং পরিমাণ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে সম্পত্তির বণ্টন সঠিকভাবে করা যায়।
- দাতব্য সংস্থায় দান: যদি উইলকারক চান, তিনি তার সম্পত্তির একটি অংশ কোনো দাতব্য সংস্থায় দান করতে পারেন। তবে এটি সঠিকভাবে উইলে উল্লেখ করা থাকা উচিত, যাতে পরবর্তীতে সেই ইচ্ছা কার্যকর হয়।
- আইনি পরামর্শ গ্রহণ করা: উইল তৈরি করার সময় একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া ভালো। এতে উইলের আইনি বৈধতা এবং প্রক্রিয়াটি সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়।
- পরিবারের সদস্যদের মতামত: উইল তৈরি করার আগে উইলকারক চাইলে পরিবারের সদস্যদের সাথে আলোচনা করতে পারেন। এতে পরিবারের সদস্যরা সম্পত্তির বণ্টনের বিষয়ে অবগত থাকবে এবং পরবর্তীতে কোনো বিরোধ সৃষ্টি হবে না।
৬. উইল বা অছিয়তের গুরুত্ব
উইল বা অছিয়ত তৈরি করা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে একজন ব্যক্তি তার মৃত্যুর পরেও সম্পত্তি এবং সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টন নিশ্চিত করতে পারেন। উইল তৈরি করার গুরুত্ব কিছু মূল দিক থেকে তুলে ধরা যেতে পারে:
- পারিবারিক বিরোধ থেকে মুক্তি: উইল না থাকলে পরিবারে সম্পত্তি বণ্টন নিয়ে অনেক সময় বিরোধ সৃষ্টি হয়। উইলের মাধ্যমে এই বিরোধ এড়ানো যায়, কারণ উইলে স্পষ্টভাবে সম্পত্তির বণ্টনের নির্দেশনা দেওয়া থাকে।
- আইনি সুরক্ষা: উইল একটি আইনি নথি হিসেবে কাজ করে এবং উইলকারকের ইচ্ছার পূর্ণ মর্যাদা দেয়া হয়। এতে কোনো অবৈধ দাবি বা সম্পত্তি দখল করার চেষ্টাকে প্রতিহত করা যায়।
- সম্পত্তি ব্যবস্থাপনার সুষ্ঠু দিকনির্দেশনা: উইল তৈরি করলে সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা এবং সম্পত্তির উত্তরাধিকারীদের জন্য দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়, যা সম্পত্তি নিয়ে ভবিষ্যতে কোনো জটিলতা সৃষ্টি হতে দেয় না।
- দাতব্য কাজ: যদি কেউ তার সম্পত্তি দাতব্য কাজে দান করতে চান, তাহলে উইল হল সবচেয়ে কার্যকর উপায়। এতে দানের ইচ্ছা অনুযায়ী সম্পত্তি বণ্টন করা হয় এবং উইলকারকের মৃত্যুর পরও তার ইচ্ছা পূরণ হয়।
৭. উইলের আইনগত বিষয়াবলী
বাংলাদেশে উইল সম্পর্কিত আইন ইসলামী আইন এবং সিভিল আইনের মিশ্রণ। ইসলামী আইনে উইল একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, এবং উইলকারকের মৃত্যুর পর তার সম্পত্তি সুষ্ঠুভাবে বণ্টিত হয়। সিভিল আইন অনুসারে উইল তৈরি এবং কার্যকর করার জন্য কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করতে হয়।
৮. ইসলামী আইন অনুসারে উইল
ইসলামী আইনে উইল বা অছিয়ত হল এমন একটি নথি, যার মাধ্যমে একজন মুসলিম তার মৃত্যুর পর তার সম্পত্তি থেকে এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত সম্পদ দান করতে পারে, যা তার পরিবারের বাইরে অন্য কোনো ব্যক্তির মধ্যে বণ্টিত হতে পারে।
৯. সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ)
উইল কি এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?
উত্তর: উইল বা অছিয়ত একটি আইনি দলিল যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি তার মৃত্যুর পর তার সম্পত্তি কিভাবে বণ্টন করা হবে তা নির্ধারণ করে দেন। এটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ এর মাধ্যমে সম্পত্তি বণ্টনের বিষয়ে ব্যক্তির ইচ্ছা স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয় এবং তার মৃত্যুর পর সম্পত্তি নিয়ে কোনো বিরোধ সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। উইল আইনি সুরক্ষা প্রদান করে এবং পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সুষ্ঠু বণ্টনের নিশ্চয়তা দেয়।
কিভাবে উইল বা অছিয়ত তৈরি করতে হয়?
উত্তর: উইল তৈরি করতে হলে প্রথমে উইলকারককে তার সমস্ত সম্পত্তির তালিকা তৈরি করতে হবে এবং কাকে কিভাবে সেই সম্পত্তি বণ্টন করবেন তা নির্ধারণ করতে হবে। এরপর একজন আইনজীবীর সহায়তায় উইলটি আইনি নথিপত্র হিসেবে তৈরি করতে হবে। কমপক্ষে দুইজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে উইলকারকের স্বাক্ষর এবং সাক্ষীদের স্বাক্ষর থাকতে হবে। উইলটি চাইলে সরকারি নথিভুক্তিকরণ অফিসে রেজিস্ট্রেশন করানো যেতে পারে।
উইল পরিবর্তন করা সম্ভব কি?
উত্তর: হ্যাঁ, উইল পরিবর্তন বা বাতিল করা সম্ভব। উইলকারক যদি ইচ্ছা করেন, তিনি যে কোনো সময় তার উইল পরিবর্তন বা সম্পূর্ণভাবে বাতিল করতে পারেন। পরিবর্তনের ক্ষেত্রে নতুন উইল তৈরি করতে হবে এবং পুরানো উইল বাতিল বলে গণ্য হবে। নতুন উইল তৈরি করার সময় আইনি পরামর্শ নিয়ে নথিভুক্ত করানো উচিত।
উইল না থাকলে সম্পত্তি কীভাবে বণ্টিত হয়?
উত্তর: যদি কোনো ব্যক্তি উইল তৈরি না করে মারা যান, তাহলে তার সম্পত্তি দেশের উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী বণ্টিত হয়। বাংলাদেশে মুসলিম ব্যক্তির ক্ষেত্রে ইসলামী শরীয়াহ অনুযায়ী এবং হিন্দু বা অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের ক্ষেত্রে তাদের নিজ নিজ পারিবারিক আইন অনুসারে সম্পত্তি বণ্টিত হয়। তবে উইল না থাকলে অনেক সময় সম্পত্তি বণ্টন নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হতে পারে।
উইল বা অছিয়ত তৈরির জন্য কি বিশেষ কোনো বয়সসীমা আছে?
উত্তর: হ্যাঁ, উইল তৈরি করার জন্য উইলকারকের ন্যূনতম ১৮ বছর বয়স হতে হবে এবং তিনি মানসিকভাবে সুস্থ হতে হবে। আইনত প্রাপ্তবয়স্ক এবং মানসিকভাবে সুস্থ না হলে উইলকারক উইল তৈরি করতে পারবেন না।
(ফলো করুন আমাদের Google News, Facebook এবং Twitter পেজ)
আরও পড়ুন : দলিল রেজিস্ট্রেশন কেন করবেন, কিভাবে করবেন
মন্তব্য লিখুন