হোম দেশের আইন ভোক্তা অধিকার ভঙ্গে অভিযোগ কীভাবে করবেন
দেশের আইন

ভোক্তা অধিকার ভঙ্গে অভিযোগ কীভাবে করবেন

ভোক্তা অধিকার
শেয়ার করুন

ভোক্তা অধিকার কি এবং কিভাবে প্রয়োগ করতে পারি – এ প্রশ্নের উত্তর এখন ভোক্তা অধিকার আইনেই রয়েছে। যিনি উৎপাদিত পণ্য ও সেবা চূড়ান্ত ভোগের জন্য ক্রয় করেন, অর্থনীতির ভাষায় তাকে ভোক্তা বলে। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, যিনি কোনো পণ্য ক্রয় করেন কেবল নিজে ভোগ করার জন্য; তিনিই ভোক্তা। প্রত্যেক ভোক্তাই তার জীবন ও কাজের নিরাপত্তার জন্য যথোপযুক্ত ও নিরাপদ পণ্য বা সেবা প্রাপ্তির অধিকার চায়। জীবনের নিরাপত্তা কিংবা কাজের নিরাপত্তার জন্য ভোক্তার অধিকার রয়েছে প্রতিশ্রুত পণ্য বা সেবা যথাযথভাবে পাওয়ার। সে পণ্য বা সেবা সঠিক মানে, সঠিক মাপে পাওয়ার অধিকার তার রয়েছে। পণ্য বা সেবার নির্ধারিত মূল্য বা বিনিময়ে সে পণ্য বা সেবা পাওয়া ভোক্তার অধিকার।

১. আপনার ভোক্তা অধিকার

একজন ব্যক্তি যখন কোনো পণ্য ক্রয় করেন, তখন তার জানার অধিকার রয়েছে পণ্যটি কবে উৎপাদিত হয়েছে, কোথায় উৎপাদিত হয়েছে এবং এর কাঁচামাল কী কী, মূল্য কত ইত্যাদি। এর যেকোনোটির ব্যত্যয় ঘটলে সে পণ্য বা সেবাদানকারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করার অধিকার তিনি সহজাতভাবেই ভোগ করবেন। সর্বোপরি কোনো পণ্য বা সেবা ব্যবহারের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার ক্ষতিপূরণ পাওয়াও ভোক্তার একান্ত অধিকার।

২. ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন

পণ্য ক্রয়ে প্রতারণার হাত থেকে ভোক্তাদের সুরক্ষা দিতে বাংলাদেশ সরকার ২০০৯ সালে বহুল প্রতীক্ষিত ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন করেছে। এ আইনের ফলে কোনো ভোক্তা পণ্য ক্রয়ে পণ্যের ওজন, পরিমাণ, উপাদান, মূল্যসহ কোনো বিষয়ে প্রতারিত হলে তার প্রতিকার পেয়ে থাকেন। অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ এই গুরুত্বপূর্ণ আইনটি সম্পর্কে অবগত নয়। এমনকি শিক্ষিত সমাজের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ব্যক্তির মধ্যেও এই আইন সম্পর্কে তেমন কোনো ধারণা নেই।

এই আইন সম্পর্কে কোনো ধারণা না থাকার দরুন প্রতারিত হওয়ার ঘটনা বেড়েই চলেছে।

৩. ভোক্তা অধিকার আইনের ধারাসমূহ

৩৭ ধারা মোতাবেক পণ্যের মোড়ক না থাকলে বা মোড়কে পণ্যের তথ্য না থাকলে বিক্রেতা অনধিক ১ বছরের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।

৩৮ ধারায় পণ্যের দাম সহজে দৃশ্যমান কোনো স্থানে না রাখলে ১ বছরের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে। ৩৯ ধারায় উল্লেখ করা আছে, সেবার দাম সংরক্ষণ এবং সহজে দৃশ্যমান কোনো স্থানে না রাখলে বিক্রেতা অনধিক ১ বছরের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।

৪০ ধারা অনুযায়ী, ধার্যকৃত মূল্যের অধিক মূল্যে পণ্য, সেবা বা ওষুধ বিক্রি করলে বিক্রেতা অনধিক ১ বছরের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।

৪১ ধারা অনুযায়ী ভেজাল পণ্য বা ওষুধ বিক্রি করলে বিক্রেতা অনধিক ৩ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ২ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। ৪২ ধারা অনুযায়ী খাদ্যপণ্যে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কোনো নিষিদ্ধ দ্রব্য মিশিয়ে বিক্রি করলে বিক্রেতা অনধিক ৩ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ২ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।

৪৩ ধারায় উল্লেখ আছে, জীবন বা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এমন পণ্য অবৈধ উপায়ে বিক্রি করলে বিক্রেতা অনধিক ২ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।

৪৪ ধারায় উল্লেখ আছে, পণ্যের মিথ্যা বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্রেতার সঙ্গে প্রতারণা করলে অনধিক ১ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ২ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন ইত্যাদি।

৪. ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ

বাংলাদেশে ভোক্তা অধিকার রক্ষার জন্য বিভিন্ন নিয়ম ও ব্যবস্থা রয়েছে। ভোক্তারা তাদের অধিকার লঙ্ঘিত হলে অভিযোগ করতে পারেন। নিচে ভোক্তা অধিকার অভিযোগ করার পদ্ধতি দেয়া হলো:

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান যা ভোক্তাদের অভিযোগ গ্রহণ ও সমাধান করে। এখানে অভিযোগ করার পদ্ধতি:

  • লিখিত অভিযোগ: ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে লিখিত অভিযোগ দাখিল করতে হবে। এতে ঘটনার বিবরণ, প্রতিষ্ঠানের নাম, পণ্যের বা সেবার নাম এবং অভিযোগকারীর পরিচয়পত্রের কপি থাকতে হবে।
  • অনলাইন অভিযোগ: অনলাইনেও অভিযোগ দাখিল করা যায়। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে গিয়ে নির্ধারিত ফর্ম পূরণ করে অভিযোগ করা যায়। ওয়েবসাইট লিঙ্ক: http://dncrp.portal.gov.bd
  • হটলাইন: ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের হটলাইন ১৬১২১ বা ০৩৩৩৪-০০৬৩৫ এ কল করে অভিযোগ করতে পারেন।

মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে অভিযোগ

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের “ভোক্তা অধিকার” নামে একটি মোবাইল অ্যাপ রয়েছে। অ্যাপটি ডাউনলোড করে অভিযোগ দাখিল করা যায়।

৫. অন্যান্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান

ভোক্তা অধিকার সম্পর্কিত অন্যান্য সংস্থার কাছে অভিযোগ দায়ের করা যেতে পারে, যেমন:

  • জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কাউন্সিল
  • পণ্যের মান যাচাই করার সংস্থা (বিএসটিআই)

৬. অভিযোগের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য:

  • অভিযোগকারীর নাম, ঠিকানা, এবং ফোন নম্বর
  • অভিযোগের বিস্তারিত বিবরণ
  • ক্রয় রশিদ বা কোন প্রমাণ থাকলে তা যুক্ত করতে হবে
  • অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের নাম ও ঠিকানা

৭. অভিযোগের প্রক্রিয়া:

১. অভিযোগ জমা দেওয়ার পর ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর তা যাচাই করে। ২. প্রয়োজন হলে তদন্ত করা হয়। ৩. অভিযোগ সঠিক প্রমাণিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়, যেমন জরিমানা আরোপ বা সেবা/পণ্য প্রতিস্থাপন।

অভিযোগ দায়েরের সময়সীমা

ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর ধারা ৬০ অনুযায়ী, কোন ব্যক্তি কারণ উদ্ভব হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে এই আইনের অধীন অভিযোগ দায়ের করতে হবে। অন্যথায় উক্ত অভিযোগ গ্রহণযোগ্য হবে না।

জরিমানার অর্থের ২৫% প্রদান

দায়েরকৃত আমলযোগ্য অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত ও জরিমানা আরোপ করা হলে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর ধারা ৭৬(৪) অনুযায়ী আদায়কৃত জরিমানার ২৫ শতাংশ তাৎক্ষণিকভাবে অভিযোগকারীকে প্রদান করা হবে।

অভিযোগ দায়েরের পদ্ধতি

ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর ধারা ৭৬ (১) অনুযায়ী, “যে কোন ব্যক্তি, যিনি, সাধারণভাবে একজন ভোক্তা বা ভোক্তা হইতে পারেন, এই অধ্যাদেশের অধীন ভোক্তা-অধিকার বিরোধী কার্য সম্পর্কে মহাপরিচালক বা এতদুদ্দেশ্যে মহাপরিচালকের নিকট হতে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে অবহিত করিয়া লিখিত অভিযোগ দায়ের করিতে পারিবেন।”

৮. যেখানে অভিযোগ দায়ের করা যাবে

মহাপরিচালক, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর,

১ কারওয়ান বাজার (টিসিবি ভবন-৮ম তলা),

ঢাকা,

ফ্যাক্স: +৮৮০২ ৮১৮৯৪২৫

জাতীয় ভোক্তা অভিযোগ কেন্দ্র,

টিসিবি ভবন- ৯ম তলা,

১ কারওয়ান বাজার ঢাকা,

ফোন: ০১৭৭৭ ৭৫৩৬৬৮

ইমেইল- [email protected]

উপ পরিচালক, সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়

জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর

বিভাগীয় পর্যায়ে সরকারী বহুতল ভবন,

ভবন নং-০২, আলমপুর, সিলেট

ফ্যাক্স: +৮৮০৮ ২১৭২৮৬৯৫

মোবাইল- ০১৭৯৯২৬৭৪৯২, ০১৭১৫৩৪৮০৯০

ইমেইল-[email protected]

৯. যেভাবে অভিযোগ দায়ের করতে হবে

দায়েরকৃত অভিযোগ অবশ্যই লিখিত হতে হবে।ফ্যাক্স, ই-মেইল, ওয়েব সাইট, ইত্যাদি মাধ্যমে অভিযোগ দায়ের করা যাবে। অভিযোগের সাথে পণ্য বা সেবা ক্রয়ের রশিদ অথবা যাবতীয় প্রমাণাদি সংযুক্ত করতে হবে।অভিযোগকারী তাঁর পূর্ণাঙ্গ নাম ও ঠিকানা, পিতা ও মাতার নাম, ফোন, ফ্যাক্স ও ই-মেইল নম্বর (যদি থাকে) এবং পেশা উল্লেখ করবেন।

সাবস্ক্রাইব করুন
সাবস্ক্রাইব
আইন সমাচার থেকে সরাসরি সর্বশেষ আপডেট, টিউটোরিয়াল পেতে আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন।
শেয়ার করুন
লিখেছেন
আইন সমাচার - প্রধান প্রতিবেদক

আইন ও বিচার বিষয়ে এ বাংলা ব্লগ চালু করার উদ্দেশ্য হলো, সাধারণ মানুষকে প্রয়োজনীয় আইন সম্পর্কে সঠিক ব্যাখ্যা তুলে ধরা। আইন ও বিচার সম্পর্কিত যে কোন ধরনের তথ্য, ব্লগ আপডেট সবসময় পাঠকের সামনে তুলে ধরাই আইন সমাচার এর মূল লক্ষ্য। আমরা নিরপেক্ষ তথ্য সরবারহের জন্য সম্পূর্ণই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিনামূল্যে আইন বিষয়ক সমস্যার সমাধান, সেবা, সহায়তা করাও আ্রইন সমাচার এর অন্যতম উদ্দেশ্য।

মন্তব্য লিখুন

Leave a Reply

সাবস্ক্রাইব করুন
সাবস্ক্রাইব
আইন সমাচার থেকে সরাসরি সর্বশেষ আপডেট, টিউটোরিয়াল পেতে আমাদের নিউজলেটার সাবস্ক্রাইব করুন।